রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ উপস্থিত থেকে ৭৮ বছর বয়স্ক সাত্তারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন । সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে । ১৯৮১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ধার্য করা হয় ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তারকে মনোনয়ন দেয় । কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির লাভজনক পদে থাকায় নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না । সংসদে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ষষ্ঠ সংশোধনীর মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো উপরাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক নয় । সুতরাং বিচারপতি সাত্তারের নির্বাচন করার আর আইনি বাধা থাকল না। সেনাপ্রধান লে.জেনারেল এরশাদ অতিমাত্রায় আনুগত্য দেখাতে গিয়ে ঘোষণা দিলেন যে, সেনাবাহিনী নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তারের পক্ষে থাকবে । নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি প্রার্থী সাত্তার সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে । বিরোধী দল নির্বাচনে কারচুপিরও অভিযোগ তোলে ।
নির্বাচিত হয়ে বিচারপতি সাত্তার ২৮শে নভেম্বর ১৯৮১ বিয়াল্লিশ (৪২) সদস্যের বিশাল মন্ত্রিসভা গঠন করেন । কিন্তু, জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপির মধ্যে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করে । এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে সাত্তারের জন্য প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে । সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিচারপতি সাত্তার মাত্র সাড়ে তিন মাসের মন্ত্রিসভা বাতিল করেন । এসব করেও তিনি শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হন । সেনাপ্রধান এরশাদ বলপূর্বক নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন । অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে সামরিক আইন জারি করে বলেন 'দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে এবং সামরিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংকট হতে জনসাধারণকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে হয়েছে।' অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা এমন নানা অজুহাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করে । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এরশাদ ১৯৮২- ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসনকালে জনসাধারণকে সংকটমুক্ত করার পরিবর্তে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি করেছেন ।
Read more